মেনু নির্বাচন করুন
জেলা পরিষদের নীলফামারী, এ স্বাগতম

জেলা পরিষদ, নীলফামারী জেলা পরিষদের কাঠামো বৃটিশ সরকার এ দেশে ক্ষমতায় থাকার সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। বৃটিশ সরকার ১৮৭০ সালে বেঙ্গল চৌকিদারী আইন পাশ করেন এবং পরবর্তীতে ১৮৮৫ সালে বেঙ্গল লোকাল সেল্ফ গভর্মেণ্ট অ্যাক্ট পাশ করেন। উক্ত আইনের আওতায় জেলা পর্যায়ে রোড, ব্রীজ, স্বাস্থ্য, দাতব্য চিকিৎসালয়, পানীয় ও জলের ব্যবস্থা, প্রাথমিক শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে ক্ষমতা দিয়ে জেলা বোর্ড গঠন করা হয়। জেলা বোর্ডের অর্ধেক সদস্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধি এবং অর্ধেক সদস্য বিদ্যমান ইউপি চেয়ারম্যান/সদস্য ও পৌরসভার চেয়ারম্যান/সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করা হয়। জেলা প্রশাসককে পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান করে ডিস্টিক্ট্র বোর্ড গঠণ করা হয়।

পাকিস্তান আমলে বেসিক ডেমোক্রেসি অর্ডার,১৯৫৯ জারি করে এ দেশে চার স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার কাঠামো গঠন করা হয়। বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ১৯৭২ সালে জারিকৃত রাষ্ট্রপতির ৭নং আদেশ দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যমান সকল স্থানীয় সরকার কমিটি ভেঙে দেয়। এসব অবলুপ্ত কমিটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার কিছু কমিটি নিয়োগ করে। অধিকন্তু ইউনিয়ন কাউন্সিল ও জেলা কাউন্সিল যথাক্রমে ইউনিয়ন পঞ্চায়েত (পরবর্তী সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ) ও জেলা বোর্ডে (পরবর্তী সময়ে জেলা পরিষদ) রূপান্তরিত হয়। অবশ্য থানা কাউন্সিল ও বিভাগীয় কাউন্সিলের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো কমিটি নিয়োগ করা হয় নি। ১৯৭২ সালের সংবিধানে স্থানীয় সংস্থার মৌলিক কাঠামো ও কার্যাবলি সম্পর্কিত বিধান সংযোজন করা হয়। বিশেষ করে সংবিধানের ৯ নং অনুচ্ছেদে বিধান রাখা হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রতিটি প্রশাসনিক ইউনিটে স্থানীয় সংস্থা গঠন করা যায়। ১৯৭৩ সালে নতুন করে জারিকৃত রাষ্ট্রপতির আদেশের (আদেশ নং ২২) অধীনে গঠিত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির আদেশ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে যে, কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত একটি ইউনিয়ন পরিষদ তিনটি ওয়ার্ডে বিভক্ত হবে এবং প্রত্যেক ওয়ার্ডে তিনজন করে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হবে, অর্থাৎ একটি ইউনিয়নে মোট নয়জন সদস্য নির্বাচন করা হবে। তাছাড়া এ আদেশে ইউনিয়নের সকল ভোটারের সরাসরি ভোটে চেয়ারম্যান এবং ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচন করার বিধান রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যানের মেয়াদকাল, যোগ্যতা, দায়িত্ব, ইউপি চেয়ারম্যান/ভাইস-চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের অপসারণ করার বিধানও এ আদেশে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনুরূপভাবে থানা ও জেলা উভয় পর্যায়ে পদাধিকার বলে যথাক্রমে মহকুমা প্রশাসক এবং ডেপুটি কমিশনারকে চেয়ারম্যান করার বিধান করা হয়েছে।

জেলা পরিষদ, নীলফামারী ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানো হয় এবং স্থানীয় সংস্থা সম্পর্কিত বিধানাবলি অকেজো হয়ে পড়ে। অবশ্য নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক স্থানীয় সংস্থা গঠনের বিধান রাখা হয়, তবে এর অধিকাংশই নির্বাচনভিত্তিক নয়। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট একদল সামরিক কর্মকর্তার হাতে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন।[২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি কর্তৃক পরিচালিত জনমত জরিপে শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত হন] এবং ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন (আগস্ট ১৯৭৫) হওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

১৯৭৬ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমানের নতুন সরকার স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ জারি করে। এতে তিন ধরনের গ্রামীণ স্থানীয় সরকার গঠনের বিধান রাখা হয়, যথা, ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পরিষদ এবং জেলা পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদের গঠন ও কার্যাবলি বলতে গেলে ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির ২২ নং অধ্যাদেশের অনুরূপই থেকে যায়। তবে ব্যতিক্রম শুধু ভাইস-চেয়ারম্যানের পদের বিলুপ্তি এবং দু’ধরনের অতিরিক্ত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের সংযোজন, যেমন দুজন মনোনীত মহিলা সদস্য এবং দুজন মনোনীত কৃষক সদস্য। ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদকাল পাঁচ বছর নির্ধারিত ছিল। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের যোগ্যতা, তাদের অপসারণ প্রক্রিয়া এবং একইভাবে ইউপি কার্যক্রম কি হবে স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশে তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ব্যাপক মাত্রায় আরোপিত হয়, যেমন নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ মহকুমা প্রশাসক ইউনিয়ন পরিষদের যেকোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। চল্লিশটি কার্যক্রম এই পরিষদের প্রধান কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এদের মধ্যে প্রধান হলো জনকল্যাণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, রাজস্ব সংগ্রহ, উন্নয়ন ও বিচার। কিন্তু এর রাজস্ব উৎস সরকারি অনুদান, ট্যাক্স ও ফি ইত্যাদি ১৯৫৯ সালের মৌলিক গণতন্ত্র আদেশের মতো প্রায় একই রকম রয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট থানার নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সরকার নির্ধারিত থানা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা সমন্বয়ে থানা পরিষদ গঠিত হয়। মহকুমা প্রশাসক এ পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সার্কেল অফিসার ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করতেন। এ পরিষদের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর মহকুমা প্রশাসক ব্যাপক নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। চেয়ারম্যান/ভাইস-চেয়ারম্যানের কার্যকালের মেয়াদ, যোগ্যতা, অপসারণ প্রক্রিয়া এবং ছুটি বিষয়ে ১৯৭৬ সালের স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশে কোনো উল্লেখ ছিল না। থানা পরিষদের প্রাথমিক কাজ ছিল এর এখতিয়ারের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমন্বয় সাধন এবং থানার অন্তর্গত ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গৃহীত কর্মসূচির ভিত্তিতে থানা উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করা।

জেলা পরিষদ গঠিত হতো নির্বাচিত সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও মহিলা সদস্য এবং তাদের মধ্য থেকে তাদের দ্বারা নির্বাচিত একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস-চেয়ারম্যান সমন্বয়ে। নির্বাচিত সদস্যরা পূর্ণ বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন। সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে মহিলা সদস্যরা সরকার কর্তৃক মনোনীত হতেন। জেলা পরিষদের মেয়াদকাল ছিল পাঁচ বছর।

১৯৮২ সালে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকার প্রশাসনিক পুনর্গঠনের জন্য দশ সদস্যের কমিটি গঠন করে। সরকার কমিটির সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে বিশেষত থানা পর্যায়ে বিদ্যমান স্থানীয় সংস্থার পুনর্বিন্যাসের বড় ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। থানা পর্যায়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য ১৯৮২ সালের ২৩ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার (থানা পরিষদ ও থানা প্রশাসন পুনর্বিন্যাস) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। পুনর্গঠিত ব্যবস্থার অধীনে প্রত্যেক থানাকে প্রশাসনের মূল কেন্দ্ররূপে চিহ্নিত করা হয়। স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সব দায়দায়িত্ব থানা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করা হয়। জাতীয় ও আঞ্চলিক গুরুত্বসম্পন্ন কার্যাবলি এবং প্রধান প্রধান উন্নয়ন কর্মকান্ডের নিয়ন্ত্রণমূলক দায়দায়িত্ব সরাসরি জাতীয় সরকারের হাতেই রয়ে যায়। ১৯৮২ সালের স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ সংশোধন করে ১৯৮৩ সালে বিদ্যমান থানাসমূহকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তীকালে অন্যান্য গ্রামীণ স্থানীয় সংস্থা, যেমন ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ, পাবর্ত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ এবং পল­ী পরিষদ পুনর্বিন্যাসের জন্য একটি অতিরিক্ত অধ্যাদেশ ও পাঁচটি আইন পাস করা হয়। জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ এর আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে ১৫-১২-২০১১ খ্রিঃ তারিখের ৪৬.০৪২.০৩৩.০৩.০০.১৪৭.২০১১-১৪৭ নং প্রজ্ঞাপনের মাধ্যেমে জেলা পরিষদে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথম বার জেলা পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণরূপে গঠিত হয়। নির্বাচিত পরিষদ ২২-০১-২০১৭ খ্রিঃ তারিখে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নীলফামারীর প্রথম সভায় দায়িত্বভার গ্রহণ করে। সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এর যৌথস্বাক্ষরে জেলা পরিষদের আয়ন-ব্যয়ন দায়িত্ব প্রদান করেছে।

ভিডিও গ্যালেরী